Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ছবি
শিরোনাম
মুকুট রাজার পিএস এর বাড়ী
বিস্তারিত

রাজা মুকুট রায়
King Mukut Roy


যশোর জেলায় মুকুট রায় নামীয় কয়েকজন নৃপতির কাহিনী প্রচারতি আছে। (১) জয়দিয়ার মুকুট রায়, (২) ঝিনাইদহের মুকুট রায় ও (৩) ব্রাক্ষ্মন নগরের মুকুট রায়। এরা তিনজনই ঐতিহাসিক পুরুষ। প্রথম মুকুট রায় জাতিতে ব্রাক্ষ্মন। এরা কাশ্যপ গোত্রীয় চাটুতি গাঞি। তার কনিষ্ঠ ভ্রাতার নাম বিনোদ রায় । গোসাঞি দুর্গাপুরের কমলাকান্ত বন্দোপাধ্যায়ের সহিত মুকুট রায়ের কন্যা দুর্গাবতীর বিবাহ হয়। যশোর জেলার উত্তরে তাদের জমিদারী ছিল। নলডাঙ্গার রাজবংশীয়রা প্রবল হয়ে উঠলে তার জমিদারী বিলুপ্ত হয়ে যায়। দ্বিতীয় মুকুট রায় ছিলেন একজন প্রতাপশালী জমিদার। ঝিনাইদহ অঞ্চলে আজও তার অনেক কীর্তি-স্বাক্ষর আছে। মুকুট রায় শ্রোত্রীয় ব্রাক্ষ্মণ; শাণ্ডিল্য গোত্র-পরিহাল গাঞি। এর এক ভাইয়ের নাম গন্ধর্ব রায়। গৌড় বাংলার সুলতান তাকে খাঁ উপাধিতে ভূষিত করেন। গন্ধর্ব রায় জোরপূর্বক খড়দহ মহলেন অবসথী বংশীয় রাঘব চট্টোপাধ্যায়ের সহিত নিজ কন্যাকে বিবাহ দেন। মুকুট রায়ের বহু সৈন্য-সামন্ত ও হস্তি সৈন্য ছিল। তিনি ১৬ হল্কা হাতী, ২০ হল্কা অশ্ব ও ২২০০ কোড়াদারসহ বাইরে বের হতেন।

[Sen Ramsankar Report on the Agriculture Statistics of Jessore (Zhenaidha and Magura) 1873-3, Appendix, XLII.]

তিনি অনেক জলাশয় খনন করেন। জলাশয়ের মধ্যে ঢোল সমুদ্র অন্যতম। ঝিনাইদহের সন্নিকটে আজও এই বিরাট জলাশয় বিদ্যমান। ৫২ বিঘা জমি নিয়ে এই বিরাটাকায় জলাশয় খনন করা হয়েছিল। এই ঢোল সমুদ্রকে কেন্দ্র করে আজও একটি রোমাঞ্চকর উপাখ্যান ঝিনাইদহ অঞ্চলেন প্রতিটি মানুষের মুখে শোনা যায়। কথিত আছে, রাজা মুকুট রায়ের আমলে একবার ভীষণ জলকষ্ট দেখা দেয়। প্রজা মহলে জলাভাবের দরুন পড়ে যায় হাহাকার। গ্রামে গ্রামে প্রতিদিন মানুষের নিদারুণ কান্নার স্বরে বাতাস ভারি হয়ে উঠলো। প্রজারা মৃত্যুবরণ করতে লাগলো পানির অভাবে। কোথায়ও পানি নেই। চারিদিকে আর্ত মানুষের ‘পানি পানি’ রব শোনা যেতে লাগলো। বিল, বাওড়, নদী, নালা ও পুকুর সবই পানি শূন্য হয়ে গেছে। চৈত্রের কাঠ ফাটা রোদে মাটি হয়ে গেছে চৌচির। রাজা প্রজাদের দুঃখকষ্ট সহ্য করতে পারলেন না। তিনি মনস্থ করলেন যে, প্রজাদের কল্যাণের জন্যে এক বিরাট জলাশয় খনন করবেণ। সে জলাশয়ের শীতল মধুর জলে তৃষ্ণা নিবারণ করবে রাজার অগণিত প্রজারা। রাজা তাই দেখে খুশী হবেন। আবার রাজ্যে ফিরে আসবে শান্তি। প্রজারা জলকষ্টে মৃত্যুবরণ করবে না আর প্রতি বছর। দেখতে দেখতে জলাশয় খনন করবার কাজ শুরু হয়ে গেল। অসংখ্য লোক নিয়োগ করা হলো জলাশয় খনন করবার কাজে। কোদালে আঘাতে তাল তাল মাটি উঠে আসতে লাগলো। জলাশয় গভীর থেকে গভীরতর হলো। তবুও কোন পানির নিশানা পাওয়া গেল না। দিনের পর দিন চলতে লাগলো মাটি কাটার কাজ। রাজা পানি না দেখে দুশ্চিন্তায় পড়লেন। পানির জন্যে পূজা দিলেন। অনেক অনুষ্ঠানাদি পালন করলেন। কিছুতেই কিছু হলো না। রাজা রাতে ঘুমুতে পারেন না। একদিকে প্রজা মহলে হাহাকার, অন্যদিকে জলাশয়ের পানির জন্যে দুশ্চিন্তা। তিনি হতাশায় ভেঙ্গে পড়লেন। অবশেষে রাজা একদিন রাত্রে স্বপ্নে দেখলেন যে, যদি রাণী জলাশয়ে নেমে পূজা দেন, তবে নবখচিত জলাশয়ে পানি উঠে আসবে। জলাশয়ের পাড়ে বাজবে সানাই নহবত ও ঢোল সহরত। রাজা স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে রাণীকে স্বপ্নের কথা বললেন। রাণী প্রজাদের হিতার্থে জলাশয়ে নেমে পূজাদি করবার জন্যে সম্মত হলেন। একদিন শুভদিন দেখে রাণী পূজার আয়োজন করলেন। অগণিত প্রজারা এলো পূজা দেখতে। উঁচু পাড়ের ’পরে বাজতে লাগলো ঢোল সহরত। সানাইয়ের করুণ সুর ছড়িয়ে পড়তে লাগলো বাতাসে। রাণী পূজার থালা নৈবেদ্য সহকারে শুষ্ক জলাশয়ের দিকে ধীর পদে নামতে লাগলেন। আস্তে আস্তে গহীন তলদেশে এসে উপস্থিত হলেন। অবশেসে জলাশয়ের শেষ স্তরে এসে যখন তিনি পা রাখলেন, তখন দেখা গেল জলাশয়ের একদিক থেকে মাটি ফেটে প্রচণ্ড আলোড়নে হু হু করে দ্রুতবেগে ছুটে আসছে অজস্র জলধারা। রাণী পূজার নৈবেদ্য দিয়ে উপরে উঠে আসতে লাগলেন। দিকবিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে তখনো ঢোলের শব্দ। ঢোল যত জোরে বাজতে লাগলো, পানিও উঠে আসতে লাগলো ততো বেগে।ট প্রজারা উল্লাসে মেতে উঠলো। আনন্দ কলরোলের মধ্যে অজস্র জনতা শুভাশীষ বর্ষণ করতে লাগলো রাণীর প্রতি। রাণী ধীরে ধীরে উপরে উঠে আসছেন। পানিও কল কল নাদে পাক খেয়ে খেয়ে রাণীর পায়ের উপরে এসে আছড়ে পড়তে লাগলো। দেখতে দেখতে হাঁটু পর্যন্ত উঠে এলো পানি। তারপর কোমল পর্যন্ত। তারপর বুক পর্যন্ত। ঢোলের বাদ্য তখনো দ্রুত তালে বেজে চলেছে। এক সময় রাণীর মাথা ডুবে গেল। শুধু ভাসতে লাগলো কালো চুলের রাশি। এক সময় তাও দেখা গেল না। রাজা আর্তস্বরে কেঁদে উঠলেন। সেই সংগে প্রজারাও। একটু আগে যেখানে আনন্দ উল্লাস ধ্বনি ভেসে বেড়াচ্ছিল, সেখানে নেমে এলো কালো বিষাদের ছায়া। রাণী আর কখনো উঠে এলেন না চরাচরে। এই বিয়োগান্তক কাহিনী আজও শোনা যায় এ অঞ্চলে। লোকে আজও জলাশয়কে বলে ঢোল সমুদ্র। রাজা মুকুট রায়ের কীতিবিজড়িত আরো কয়েকটি জলাশয় আছে। মিঠা পুকুর ও নটি পুকুর তাদের মধ্যে অন্যতম। ঝিনাইদহের পূর্বদিকে বিজয়পুর গ্রাম। এই গ্রামে তার রাজধানী ছিল। দক্ষিণ-পশ্চিমে বাড়ি-বাথানে ছিল গোশালা। তিনি অসংখ্য গাভী পুষতেন। এই জন্যে লোকে তাকে বলতো “বৃন্দাবনের নন্দ মহারাজ”। বেড়বাড়ী নামক স্থানে তার উদ্যান ছিল। কোড়াপাড়া ছিল তার কোড়াদান সৈন্যদের আবাস স্থল। মুকুট রায়ের প্রধান সেনাপতি ছিলেন রঘুপতি ঘোষ রায় ও গয়েশউদ্দিন। তার রাজ্যমধ্যে গো-হত্যা নিষেধ ছিল। একবার গয়েশ কাজী নামক জনৈক মুসলমান গো-হত্যা করেন। রাজা মুকুট রায়ের কানে খবর পৌছলে তিনি তাকে হত্যা করেন। বঙ্গেশ্বর এই খবর শুনে তাকে শায়েস্তা করবার জন্যে তার বিরুদ্ধে বহু সৈন্য প্রেরণ করেন। রাজা মুকুট নবাব সৈন্যের আগমন বার্তা শুনে পরিবার পরিজনদের গুপ্ত দুর্গের মধ্যে লুকিয়ে রেখে যুদ্ধে যাত্রা করেন। পর পর দুই দিন যুদ্ধ হলে নবাব সৈন্য পরাজিত হয়। তার আরও দুইজন বীর যোদ্ধা ছিলেন। তাদের নাম চণ্ডি সর্দার ও কেশব সর্দার। এরা ছিলেন চণ্ডাল বংশীয়। যুদ্ধে বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা হয়ে তারা জনৈক পাঠান সৈন্যকে বন্দী করে কালী মন্দিরে বলি দেয়। রাজার অধীনে একদল পাঠান সৈন্য ছিল। তারা এ খবর পেয়ে উত্তেজিত হয়ে রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে নবাব সৈন্যের সাথে যোগ দেয়। বাড়ীবাথানে তীব্র সংঘর্ষের পর রাজা পরাজিত ও বন্দী হন। নবাব সৈন্যরা তাকে শৃঙ্খলবদ্ধ করে রাজধানীতে নিয়ে যায়। বন্দী করে নিয়ে যাবার সময় রাজার সংগে দুটি কপোত-কপোতী ছিল। রাজধানীতে বন্দীকে নেবার পর নবাব তার বীরত্বের পরিচয় পেয়ে তাকে মুক্ত করে দেন। দুর্ভাগ্যক্রমে কপোত ফিরে আসে। গুপ্ত দুর্গে অবস্থানরত পরিবার পরিজনেরা মুক্ত কপোত দেখে রাজার মৃত্যুর কথা নিশ্চিত জেনে গুপ্ত দুর্গের পাশ্ববর্র্তী খাতে আত্মহত্যা করেন। যেখানে তার কন্যারা মরেন, তার নাম কন্যাদহ। যেখানে তার স্ত্রী মারা যান, তার নাম দুই সতীনে। যেখানে রাজ দৈবজ্ঞ মরেন, তার নাম দৈবজ্ঞ দহ। রাজা মুকুট রায়ের প্রধান সেনাপতি রঘুপতি ঘোষ শৈলকুপার সন্নিকটে বাঘুটিয়া গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। তিনি ছিলেন কায়স্থ বংশীয়। তৃতীয় মুকুট রায়ের রাজধানী ছিল ব্রাক্ষ্মণ নগরে। তার অধীনে বিপুল সংখ্যক পদাতিক ও অশ্বারোহী সৈন্য ছিল। মুকুট রায়ের রাজ্য দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। উত্তর ভাগ তিনি নিজে শাসন করতেন। দক্ষিণ ভাগ শাসন করতেন তার সেনাপতি দক্ষিণ রায়। দক্ষিণ রায়ের অধীনে ছিল এক শক্তিশালী নৌবাহিনী। দক্ষিন রায়ের পিতার নাম প্রভাকর। তিনি ২৪ পরগনা জেলার দক্ষিণাংশে এক রাজ্য স্থাপন করেন। রাজা মুকুট রায়ের রাজ্য উত্তরে মহেশপুর হতে দক্ষিণে সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পশ্চিম দিকে ছিল গঙ্গা পর্যন্ত। তিনি প্রতাপশালী ছিলেন। মুসলমান বিদ্বেষী হিসাবে মুকুট রায় সমাধিক পরিচিত। তার রাজ্য সীমানার মধ্যে কোন মুসলমান আসতে পারতো না। তিনি ছিলেন গুড়াঞীভূক্ত শ্রোত্রীয় ব্রাক্ষ্মণ। বল্লাল সেনের সময় আদিশূরের আনীত পঞ্চর্ রাক্ষ্মণের সন্তান-সন্তরিতরা ছাপ্পান্ন ঘরে বিভক্ত হয়ে ছাপ্পান্নটি গ্রামে বসতি স্থাপন করে। মুকুট রায়ের পূর্বপুরুষেরা মুর্শীদাবাদ জেলার গুড় গ্রামে এসে বাস করার ফলে তাদেরকে বলা হতো গুড়গ্রামী বা গুড়গাঞী। পরবর্তীকালে গুড় গ্রামের শ্রোত্রীয় ব্রাক্ষ্মণেরা গুণের তারতম্য অনুসারে নানা শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়। এই বিভক্তি হবার দরুন শ্রোত্রীয় ব্রাক্ষ্মণের এক শাখা যশোর জেলায় এসে চেঙ্গুটিয়ার পরগনায় জমিদারী স্থাপন করেন। সম্ভবতঃ এই শ্রোত্রীয় ব্রাক্ষ্মণেরা রাজা গণেশের সময় এদেশে এসে আধিপত্য বিস্তার করেন। রাজা মুকুট রায়ের স্ত্রীর নাম লীলাবতী। তার সাত পুত্র ও এক কন্যা ছিল। তিনি অতিশয় মুসলমান বিদ্বেষী হওয়ায় গাজীর সংগে এক যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সপরিবারে আত্মহত্যা করেন। যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানার নিকটবর্তী লাউজানী গ্রামের এক সময় নাম ছিল ব্রাক্ষ্মণ নগর। ব্রাক্ষ্মন নগরে রাজা মুকুট রায়ে রাজধানীর চিহ্ন আজ বিলুপ্ত যেখানে একদিন আকাশ-ছোঁয়া রাজ অট্টালিকা মহাগর্বে স্ফীত বক্ষে মহা গৌরবে দাড়িয়ে স্পর্ধা প্রকাশ করতো, সেখানে আজ ধূধূ করা মাঠ। হাতীশালায় হাতী নেই, ঘোড়াশালা নেই ঘোড়া। পাইক, সৈন্য-সামন্ত কোমরে তলোয়ার ঝুলিয়ে আজ আর সেখানে ঘুরে বেড়ায় না। দেউরিতে প্রহরে প্রহরে বাজে মধুর নহবত। বিদেশী শত্র“ প্রতিরোধের জন্যে যুদ্ধের সাজ সাজ রব পড়ে না। দরবার বসে না। অপরাধীকে শূলে দেওয়া হয় না প্রাসাদের অভ্যন্তরে রাজ অন্তঃপুরিকাদের অলঙ্কারে শোভঅ বর্ধিত হয় না। পুকুরের পাথরের সোপানে বসে রাজবালারা হংস কুলের কেলী উপভোগ করে না। নৃত্যপটিয়সী কিন্নরীদের পায়ের হাল্কা ছন্দময় ঝঙ্কাল নাচমহলের দর্শকদের মুগ্ধ করে না। কিংবা কোন কোকিলকণ্ঠি গায়িকার সুর লহরী কর্ণ কুহরে জাগাায় না মধু বর্ষণ। দোর্দণ্ড প্রতাপে রাজধানী কাপে না। রাজার সিংহ হঙ্কারে ভীত সন্ত্রস্ত হয় না কোন নিরীহ প্রজা। রাজ্যপাট নিয়ে রাজা, মন্ত্রি, সেনাপতি, কোটাল হয় না মহাব্যস্ত। মহাকালের বুকে হারিয়ে গেছেন সেইসব মহাজনেরা। ধূলায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে রাজধানীর প্রতিটি প্রাসাদ। তারই বুকের উপর দিয়ে লোহার পাজরের রেলরাস্তা এক দৌড়েগ চলে গেছে কোলকাতার দিকে। তারই সংগে পাল্লঅ দিয়ে আর একটি পিচঢালা চওড়া রাস্তাও চলে গেছে। যেন মহাকালের দুজন বিরহী পথিক সুখ-দুঃখের গাঁথা বুকে আঁকড়ে পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে চলেছে। ব্রাক্ষ্মণ নগরের চারদিক  নদী পরিবেষ্টিত ছিল। রাজপ্রাসাদের পদ ধৌতে করে কুলু কুলু নাদে বয়ে যেত গভুড়ে নদী। সে নদী রেখা আজ পরিদৃষ্ট হয়। রাজপ্রাসাদের কিঞ্চিত দক্ষিণে আর একটি নদী ছিল, তার নাম হরিহর। নদীটি বর্তমানে হেজে মজে গেছে। এই নদীতে সর্বদা মোতায়েন থাকতো নৌ-বহর। বহিরাক্রমণ প্রতিরোধের জন্য রাজা এগুলির ব্যবস্থা করেছিলেন। রাজা মুকুট রায়ের রাজধানীর অবস্থান দেখলে সহজে অনুমিত হয় যে ব্রাক্ষ্মণ নগর ছিল সুরক্ষিত ও দুর্ভেদ্য। এই দুর্ভেদ্য নগরটিকে রাজা ঐশ্বর্য সম্পদে ও প্রাচুর্যে ভরে তুলেছিলেন। দিনে দিনে এই নগরটি এতো শ্রীবৃদ্ধি লাভ করেছিল যে, পরবর্তীকালে ব্রাক্ষ্মণ নগরের আর একটি নামকরণ হয় নব উজ্জয়নী।

 

প্রাচীন কালের পুথিঁতে ব্রাক্ষ্মণ নগর সম্বন্ধে উৎকৃষ্ট বর্ণনা দেওয়া হয়েছে:
 
“জানিবা তাহার নাম ব্রাক্ষ্মণা নগর
চারিদিকে নদী তার দেখিতে সুন্দর॥
সোনা দিয়া বান্ধিয়াছে ঘাট চারিখান
প্রতিঘাটে চারিশত সোনার নিশান॥
হেন পুরী নাহি ওগো ছিল রাবণের
মুকুট নামেতে রাজা সেইত দেশের॥”
নগরবাসীদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে:
“নগর নিবাসী যত সব ধনবান
সে দেশে কাঙ্গাল নাহি সকলে সমান॥
সুবর্ণের কুম্ভ দিয়া আনে সবে জল
বাটি ঘাটি থাল ঝারি সোনার সকল॥
একখানি ঘর নাহি সেই দেশে জুড়ি
দালান মন্দির মঠ সব বাড়ী বাড়ী॥”


পুথিঁকারের এই বর্ণনা অতিরঞ্জিত নয়। ব্রাক্ষ্মণ নগরে যে এক সময় অসংখ্য ইমারত ছিল, তার ধ্বংসাবশেষ কিছুদিন পূর্বেও দৃষ্টিগোচর হতো। প্রাচীনকালে ইটের রাস্তাঘাট, মন্দির এই গ্রামটির সর্বত্রই বিরাজমান ছিল। বর্তমানে তার কিছুমাত্র সাক্ষ্যও পাওয়া যায় না। মুকুট রায়ের প্রতিষ্ঠিত মন্দিরের ভগ্নাবশেষ লাউজানী গ্রামে বিদ্যমান। এই মন্দিরে যে শিবলিঙ্গ ছিল, তা’ কয়েক বছর পূর্বে ঝিকরগাছার কয়েকজন হিন্দু ব্যবসায়ী ঝিকরগাছা বাজারের সংলগ্ন কৃষ্ণনগরের নাট মন্দিরে এনে প্রতিষ্ঠা করেছেন। দেশ বিভাগরে বহু পূর্ব থেকেই ধ্বংসাবশেষের মধ্য থেকৈ বহু দেব-দেবীর মূর্তি উদ্ধার করেছিল। স্থানীয় প্রবাদ, ব্রাক্ষ্মণ নগরেই একমাত্র ১৬০০ ব্রাক্ষ্মণের বসতি ছিল। সারা রাজধানীময় ছিল ব্রাক্ষ্মণের আধিপত্য। কালের বিচিত্র নিয়মে আজ তাদের কোন পরিচয়ও পাওয়া যায় না।


তথ্যসূত্র: যশোরাদ্যদেশ
লেখক: হোসেন উদ্দিন হোসেন